সন্ধানী চমেক ইউনিটের নতুন মাইলফলক

রাত তখন ৯ টা।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ৪ ঠা জুন, ২০২২। হঠাৎ বিস্ফোরন। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুন মুহূর্তেই পালটে দিলো বি এম এ ডিপোতে কর্মরত মানুষগুলোর জীবন।আগুনের শিখা কেড়ে নিলো কারো বাবা, কারো স্বামী, কারোর সন্তান। এই লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী মানুষগুলো কেউ হারিয়েছে দৃষ্টিশক্তি, কেউ শ্রবণশক্তি, কেউ বা দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ। আহতদের স্বজনের বুকভাঙ্গা কান্না ও হাহাকারে জাগ্রত ছিল পুরো চট্রগ্রাম নগরী। ভাবতেই গা শিউরে উঠে যে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করা মানুষগুলো দুচোখ ভরে চারপাশের পৃথিবী এমনকি আপন মানুষগুলোকেও দেখতে পাবেনা, হাত পা হারিয়ে বদ্ধ ঘরের অন্ধকারে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে।

তাদেরই একজন নোয়াখালী জেলার সুবর্ণ উপজেলার চর হাসান গ্রামের কিশোর রিয়াজ হোসেন হৃদয়। যেই কিশোর বয়সে উপভোগ করার কথা পৃথিবীর সৌন্দর্য, উদ্দাম গতিতে ছুটে চলার, আর বিদ্যা বুদ্ধির প্রখরতায় দেশের জন্য কিছু করা সেই বয়সে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত সংসারের হাল ধরতেই রিপেয়ারিং এর কাজ করতো বিএমে ডিপো তে। আর সংসারের আয় যোগানোর উৎসই তাকে সম্মুখীন করে কঠিন বাস্তবতার। সীতাকুণ্ডতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার স্বীকার হয়ে ডান পা হাঁটুর নিচে কাটা পড়ে তার। তার বয়স ও পারিবারিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে জীবন সংগ্রামে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে সন্ধানী।

সন্ধানীর পক্ষ থেকে তার পুর্নবাসনের উদ্দেশ্যে অর্থো – লাইফ বাংলাদেশ ( সুগন্ধা আবাসিক এলাকা) নামক কৃত্রিম হাত পা সংযোজন কেন্দ্র হতে কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে। গত ১৯ ই জুলাই কৃত্রিম পা দিয়ে হাঁটাবিষয়ক তার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয় যা এক সপ্তাহব্যাপী চলে। গত ৩রা আগস্ট প্রশিক্ষণ এবং কৃত্রিম পা সংযোজন সম্পন্ন করে সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিট কার্যালয়ে আসেন হৃদয়, জানান তার অনুভুতির কথা। হৃদয় তার আনন্দের কথা প্রকাশ করে বলে এখন সে স্বাভাবিক আর পাঁচটা মানুষের মত হাঁটতে পারে। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই পারে একজন মানুষের স্বপ্ন গুলোকে অকালে ঝরে যাওয়া থেকে বাঁচাতে।

জয় হোক মানবতার, জয় হোক সন্ধানীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *