মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ে প্রকাশিত মনোলগ

 

“মানবসত্ত্বার পঞ্চইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ হল এমন একটি ইন্দ্রিয় যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন এর জন্য, পৃথিবীর সব রহস্যময় সৌন্দর্য মূর্ত হয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয়ার জন্য সবচাইতে জরুরি। মনের চোখ দিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু কল্পনা করে নিতে পারি, কিন্তু চোখের জ্যোতি নিভে গেলে সেই অন্ধকারের কথা হয়তো কোনো স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব। তাদের জীবনটা কেমন এক আলোহীন পথে চলার মত চলতে থাকে।
আমার জীবনেও এমন বিভীষিকাময় মুহূর্ত এসেছিলো সেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এ! রাতে কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমাতে যাই কিন্তু পরদিন ঘুম থেকে উঠেই দেখি চোখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে সাথে প্রচণ্ড ব্যথা। সচরাচর বাঙালি স্বভাবের কারণে শুরুতে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে এলাকার একজন পল্লীচিকিৎসক কে দেখাই ও তার দেয়া ড্রপ ও কিছু ঔষধ সেবন শুরু করি। ব্যথা তো কমেই না বরং বাড়তেই থাকে, তাও ভেবে নিয়েছিলাম যে এই চিকিৎসাতেই হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরে অবস্থা এতই খারাপ হয় যে অসহ্যকর ব্যথার সাথে সাথে আমার চোখে সাদা প্রলেপ পড়তে শুরু করে ও কিছুই দেখতে পেতাম না ঠিক মত। নিজেকে তখন কেমন অসহায় লাগতো আর আফসোস করতাম শুরুতেই কেন সঠিক চিকিৎসা নিলাম না!
এরপর আমার ছেলে আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ সন্ধানী ইউনিটে যোগাযোগ করি। তারা তৎক্ষণাৎ আমাকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন করেন। তিনি জানান আমার চোখের অপারেশন করতে হবে, কর্ণিয়া নামক একটি অংশ প্রতিস্থাপন করতে হবে। এটা জানার পর আমার পরিবারের উপর আবার দুশ্চিতার ছায়া নেমে আসে ; ভাবলাম আমার পুরো চোখ ই প্রতিস্থাপন করতে হবে কিন্তু এখন চক্ষুদাতা পাবো কই!!
সব আশার আলো যখন নিভে যেতে শুরু করে এবং একেই যখন আমি নিয়তি বলে মেনে নিই তখনই আমার অন্ধকার জীবনে আলোর রেখা নিয়ে আসে সন্ধানী। একদিন আমার ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে বলে সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিটের একটি টিম দুটো কর্ণিয়া সংগ্রহ করেছে, যা আমার জন্য রিজার্ভ করা হয়েছে।এই খবর জানার পর আমার পুরো পরিবার যেন নতুন জীবন ফিরে পায়, এদিকে আমি কবে আবার আলোর দেখা পাবো সৃষ্টিকর্তার কাছে এই দোয়া করতে থাকি।
অবশেষে দীর্ঘ ১২ দিন এই অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেন, আমার চোখের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সন্ধানীর এই মহৎ উদ্যোগের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
আমি যতটুকু জেনেছি, কর্ণিয়া মূলত একটি স্বচ্ছ আবরণ যা আমাদের চোখকে ঢেকে রাখে। চক্ষু প্রতিস্থাপন বলতে মূলত এই কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন ই বুঝায়। অনেকে হয়তো ধর্মীয় দিকে থেকে একে অসমর্থন করতে পারেন, কিন্তু আমাদের একটা জিনিস বুঝে রাখা উচিত ধর্ম কোনোদিন মানবসেবাকে অনুৎসাহিত করে না। সকল ধর্মেই এমন উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমি শুধু আর একটা বার্তা ই দিতে চাই সবাইকে যে, ‘ মরণোত্তর চক্ষু দানের মাধ্যমে চাইলেই নিজের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকা যায় এই পৃথিবীর আলোর মাঝে। যেমনটা আমার জগত রঙিন আজ অন্যের চোখের আলোয়!’ ”
– মোঃ হোসেন আলি ( কর্ণিয়া গ্রহীতা )
ঠিকানা : মাহমুদপুর, শাজিউরা,কেন্দুয়া, নেত্রকোনা
“The eye is one of the five senses of human beings that is most essential for our normal life, to capture all the mysterious beauties of the world before us. We can imagine many things with our mind, but when the light of the eyes goes out, it may be impossible for a person with normal eyesight to feel that darkness. Their lives go on like a lightless path.
There was such a horrible moment in my life in December 2019! After finishing work at night, I came back home and went to sleep normally, but when I woke up the next day, I saw that my eyes were abnormally red and there was severe pain. Usually due to the Bengali nature, at the beginning I didn’t pay much attention to it, so I went to see a village doctor and started taking drops and some medicines. The pain did not decrease but increased, but I thought that this treatment might cure it. But then the condition got so bad that with excruciating pain, my eyes started getting white and I could barely see anything. How helpless I felt then and regretted why I did not take the right treatment at the beginning!
Then my son brought me to Dhaka and contacted the Dhaka Medical College SANDHANI Unit. They immediately took me to an eye specialist. He said I had to have an eye surgery, a part called the cornea. Knowing this, the shadow of evil falls on my family again; I thought I would have to have my whole eye replaced but now where can I get an eye donor !!
SANDHANI brings a line of light in my dark life only when the light of all hope begins to go out and this is when I accept it as destiny. One day my son called me and told me that a team from the SANDHANI Chittagong Medical college unit had collected two corneas, which had been reserved for me. .
Finally, God released me from this unbearable situation for 12 long days, my eye operation was completed successfully. I will always be grateful to SANDHANI for this great initiative.
As far as I know, the cornea is basically a transparent covering that covers our eyes. Eye transplantation basically means this corneal replacement. Many may disapprove of this from a religious point of view, but one thing we must understand is that religion never discourages human service. Such initiatives have been encouraged in all religions. I just want to give another message to everyone that ‘You can survive in the light of this world even if you want to by donating an eye after your death. As my world is colorful today by the light of other people’s eyes!’ ”
– Md. Hossain Ali ( Cornea recipient )
Address : Mahmudpur, Shajiura, Kendua, Netrokona

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *