কোরবানীর বর্জ্যব্যবস্থাপনায় করণীয়

কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি :
* পশুর জন্য কেনা খড়কুটো যেখানে-সেখানে ফেলে রাখবেন না। উন্মুক্ত ডাস্টবিন ও নর্দমায় ময়লা ফেলবেন না।
* কোরবানির পশুকে যেখানে রাখবেন, সেখানে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জায়গাটিকে রোগজীবাণুমুক্ত রাখুন।
*গ্রাম এলাকাগুলোতে জবাইয়ের জায়গা ভালো করে পরিষ্কার করে এমন একটি গর্ত খুঁড়ে নিতে হবে, যাতে জবাইকৃত পশুর সম্পূর্ণ রক্ত তাতে জমা হতে পারে। এমনভাবে জবাই করতে হবে যেন পশুর রক্ত গর্তেই জমা হয়।
* পশু জবাইয়ের পরে রক্ত ও ময়লা পানি যেন রাস্তায় ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* বাড়ির আশপাশের নর্দমায় পশুর রক্ত ও বর্জ্য কখনোই ফেলবেন না। এতে অন্য বাড়ির আশেপাশে দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
* সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত পশু জবাইয়ের জায়গায় কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করুন।
* জবাইয়ের সময় পানির ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দিন। পানির অপচয় করবেন না।
* বাড়ির আশপাশে গোবর কিংবা অন্য পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে কি না, তা খেয়াল রাখুন। * নিজে সচেতনভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করুন। প্রতিবেশীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দুর্গন্ধ না ছড়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে সচেতন করুন।
* যে পোশাক পরে পশু জবাই করছেন, তা ভালো করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করুন।
* সিটি কর্পোরেশনের জন্য পশুর বর্জ্য পলিথিনের ব্যাগে ভালো করে রশি দিয়ে বেঁধে সংরক্ষণ করুন। কুকুর বা বিড়ালের নাগালের বাইরে রাখুন ময়লার ব্যাগ।
*সর্বোপরি মাস্ক পরিধান করুন, দূরত্ব বজায় রাখুন,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যেন আপনার ঈদ আনন্দকে মলিন করতে না পারে।

কোরবানি বর্জ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিঃ
দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে–
চামড়া ছাড়া একটি গরুর শরীরের মোট ওজনের চার ভাগের এক ভাগই বর্জ্য। সুতরাং সময়মতো সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন না হলে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করার পর সব ধরনের বর্জ্য অবশ্যই ছয় ঘণ্টার মধ্যেই নিষ্কাশন করতে হবে। কারণ এর পরপরই পচন ধরে বর্জ্যে নানা রোগের জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্জ্যে (গোবর) ভরা পলিথিন বা ব্যাগ ছাদে রেখে পচিয়ে কিংবা পুঁতে ফেলা বর্জ্যের গর্তের ওপর সবজিসহ যে কোনো গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন। কারণ বর্জ্য পঁচে ভালো জৈব সার হয়।
গরু-ছাগল বা ভেড়ার গোবর ও রক্তে ই-কোলাই এবং সালমোনেলা নামে দু’ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। মানব শরীরে ই-কোলাই ডায়রিয়া ও সালমোনেলা খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায়। মাছি বসলে বর্জ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া মাছির পালক ও পায়ে লেগে যায়। মাছি থেকে এসব ব্যাকটেরিয়া খাবারে ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায়। ব্যাকটেরিয়া দুটি মানুষ থেকে প্রাণীতে ও প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ করে বলে এগুলো খুবই মারাত্মক।
বর্জ্য পঁচে গেলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। সেই দুর্গন্ধে বাতাসে ভাসমান কিছু জীবাণু পচনশীল দ্রব্যে এসে বসে ও বর্জ্যের জীবাণু সেই বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ও নানা রোগের জন্ম দেয়। বিশেষ করে অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগীর শ্বাসনালির ভেতর দিয়ে ঢোকার সময় শ্বাসনালিতে সংক্রমণ ঘটায় এবং রোগগুলোর বিস্তার বাড়িয়ে দেয়।
পশুর বর্জ্য থেকে মানুষের শরীরে পেটের পীড়া, চর্ম রোগ, চোখ ওঠা ও জন্ডিসসহ নানা পানিবাহিত রোগের বিস্তার দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গরুর যক্ষ্মা ও অ্যানথ্রাক্সসহ গরুর আরও কিছু রোগ পানিতে মিশ্রিত বর্জ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও বিস্তার ঘটাতে পারে।।
নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতন না হলে শুধু রাষ্ট্রের পক্ষে এ বিশাল বর্জ্য অপসারণ খুবই কঠিন। আসুন নিজে সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি।আমার কোরবানি বর্জ্য আমিই অপসারণ করবো এমনি হোক আমাদের মানসিকতা।
Related posts
- No related posts.