বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম
দেশে করোনা ভাইরাস বর্তমানে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে যার দরুন ক্রমাগত সংক্রমণ হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচী যথাযথ নিয়মে পালিত হচ্ছে।
কিন্তু এই টিকাদান সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? টিকা নিয়ে আমাদের অনেকের মাঝেই রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। তাই টিকাদানের পূর্বে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা জরুরি। যেমনঃ
১.টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এফডিএ ও সিসিডি দ্বারা পরীক্ষাকৃত এবং অনুমোদিত।
কোভিড ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মাঝেই দ্বিমত রয়েছে। আবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ভিন্ন তা নিয়েও রয়েছে নানান সমালোচনা।। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ তাদের জনগণকে এই ফাইজার, মডার্না, সিনোফার্মসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকা দিয়েই মৃত্যুর হার যথেষ্ট কমিয়ে আনতে পেরেছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হাসপাতালগুলোয় মৃত্যুর জরিপে দেখা যায়, যারা টিকা গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার অবিশ্বাস্যভাবে বেশি।
টিকা গ্রহণের পর ও আপনি কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে মৃত্যুঝুকি একেবারেই কম।
অতএব টিকা গ্রহণ করুন।
২.অবশ্যই দুই ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে, ডোজ পূর্ণ না হলে এর সঠিক কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকবে না।
৩.নির্দিষ্ট ব্যবধানে এবং শরীরের একই স্থানে পরের ডোজ গ্রহণ করতে হবে।
তাছাড়া ভ্যাক্সিন থেকে কোনভাবেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আবার কারো কারো টিকাগ্রহণের পরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তবে এতে ভয়ের কিছু নেই বরং এটা স্বাভাবিক। তবে খুব বেশি সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। টিকাগ্রহণের পরে যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেঃ
১. ভ্যাক্সিনেশন স্থান লাল হওয়া বা ব্যাথা অনুভূত হওয়া, যা খুব দ্রুত সেরে যায়
২.মৃদু জ্বর অনুভূত হতে পারে
৩.ক্লান্তি বা দূর্বলতা বোধ
৪.মাথাব্যাথা, শরীরের অন্যান্য জায়গায় বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যাথা অনুভূত হওয়া।
টিকা গ্রহণের জন্য গ্রাহকদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিচের প্রক্রিয়া অনুসরণ করুনঃ
১. প্রথমে surokkha.gov.bd পোর্টালের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ও সঠিক মোবাইল নাম্বার যাচাইপূর্বক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
২.পরবর্তীতে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম উল্লেখপূর্বক মোবাইলে SMS পাবেন।
৩.নির্দিষ্ট তারিখে SMS প্রাপ্তি সাপেক্ষে টিকা কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সম্মতিপত্র সহ টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করবেন।
★ কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সংক্রান্ত সচরাচর জিজ্ঞাসা গুলো দেখা যায়—
⚫ বাংলাদেশে কোন কোন ভ্যাক্সিন এভেইলেবল?
– বাংলাদেশে এপর্যন্ত যেসব ভ্যাক্সিন এসেছে, সেগুলো হলোঃ
১. Oxford AstraZeneca (ফেব্রুয়ারীর পর থেকে কয়েক মাস এটি দেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানে unavailable)
২. Sinopharm (উপজেলায় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে চলছে)
৩. Moderna (সিটিকর্পোরেশন এলাকায় বর্তমানে চলছে)
৪. Pfizer (শুধুমাত্র প্রবাসীদেরকে দাওয়া হবে)
⚫ আমি কয়েক মাস আগে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, কিন্তু টিকা দাওয়া হয়নি তখন। এখন টিকা দাওয়ার জন্য কি আবার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?
– দ্বিতীয়বার রেজিস্ট্রেশন করা যাবেনা, আর কোন দরকারও নেই। আগের রেজিস্ট্রেশন দিয়েই আপনি চাইলে এখন টিকা দিতে পারবেন। টিকাকার্ডটি প্রিন্ট করে নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে চলে যান।
⚫ প্রথম ডোজ দাওয়া হয়েছে অনেক আগে। দ্বিতীয় ডোজের SMS আসেনি এখনও। কি করবো?
– প্রথম ডোজে আপনি যদি অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিন দিয়ে থাকেন, তাহলে আপাতত আপনি দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারবেন না। অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিন যেহেতু বর্তমানে এভেইলেবল নেই, তাই অন্য কোন ভ্যাক্সিন দ্বিতীয় ডোজে দাওয়া যাবেনা। কারণ দুইটা ভিন্নধরনের ভ্যাক্সিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি। অক্সফোর্ডের আরো কিছু ভ্যাক্সিন আগামী মাসে তথা আগস্টের দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি, তাদের SMS এর মাধ্যমে টিকা দাওয়ার জন্য ডাকা হবে। (বি.দ্রঃ অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিন ৪৫ সপ্তাহ পর দিয়েও ভালো রেসপন্স পাওয়া গেছে রিসেন্ট একটা স্টাডিতে। তাই দেরী হওয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অপেক্ষা করুন।)
⚫ কোন ভ্যাক্সিনটি সবচেয়ে ভাল?
– প্রতিটা ভ্যাক্সিনই সবধরনের ট্রায়াল শেষ করে, WHO এর সম্পূর্ণ অনুমোদন নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। প্রতিটা ভ্যাক্সিনই প্রায় একই কাজ করে। তাই “কোন ভ্যাক্সিন দিবো” সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দ্রুত আপনার নিকটস্থ কেন্দ্রে যেটা এভেইলেবল, সেটাই দিয়ে ফেলুন। আপনার কোনরকম সংশয় থাকলে Internet থেকে valid data এনালাইসিস করুন। অন্যকে কখনও ডিমোটিভেট করবেননা। দ্রুত দেশের একটা বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনতে না পারলে এই আক্রান্তের হার কখনও কমবেনা।
⚫ SMS ছাড়া টিকা দাওয়া যাবে কিনা?
– না, SMS ছাড়া টিকা দিচ্ছেনা। রেজিস্ট্রেশনের পর অনুগ্রহ করে SMS আসার জন্য অপেক্ষা করুন। SMS আসতে দেরী হতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে এক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন।
⚫ NID ছাড়া কোনভাবে ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা যাবে কিনা?
– না যাবেনা। শুধুমাত্র বিদেশ গমনে ইচ্ছুক যারা, তাদের রেজিস্ট্রেশন পাসপোর্ট নাম্বারের সাহায্যে করা যায়। অন্যান্যদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপাতত NID আবশ্যক।
⚫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিনা। কি করবো?
– বিভিন্ন ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্টুডেন্টদের একটা তালিকা করে সেটা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হচ্ছে। যার যার NID নাম্বার দাওয়া হয়েছে, সার্ভারে সেটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। যাদের NID নাম্বারের তালিকা সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাদের রেজিস্ট্রেশনই শুধু করা যাচ্ছে। আপনি যদি রেজিস্ট্রেশন করতে না পারেন, অনুগ্রহ করে আপনার ভার্সিটির কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।
⚫ দুই ডোজ টিকা দাওয়া শেষ, তবুও সার্টিফিকেট আসেনাই। কি করবো?
– আপনার দুই ডোজ টিকাদানের তথ্য হয়তো এখনও সার্ভারে এন্ট্রি করা হয়নি। আপনি টিকা কার্ডটি নিয়ে যেই কেন্দ্রে টিকা দিয়েছেন, সেখানে গিয়ে কথা বলুন। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা আপনার টিকাকার্ডটি স্ক্যান করে আপনার টিকাগ্রহনের ডেইটটি সার্ভারে এন্ট্রি করে দিলে আপনি ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
⚫ টিকা দাওয়ার ডেইট ছিলো অমুক তারিখ। কিন্তু সেদিন কোন একটা কারণে যেতে পারিনাই। দুইতিনদিন পরে কি যেয়ে টিকাটা দিতে পারবো?
– হ্যা পারবেন। SMS পাওয়ার পর যেকোন সময় টিকাকার্ডটা প্রিন্ট করে নিয়ে গেলেই হবে।
⚫ প্রবাসীদের জন্য টিকা দাওয়ার ক্ষেত্রে কি করা লাগবে?
– বিদেশগমনে ইচ্ছুক যারা, তাদের জন্য বর্তমানে টিকাগ্রহনের নিবন্ধন চলছে। নিবন্ধনের জন্য playstore থেকে “আমি প্রবাসী” app টি ইন্সটল করে সেখানে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করুন, এবং নির্ধারিত ফি জমা দিন। এরপর কিছুদিনের মধ্যে আপনার নামের তালিকা সার্ভারে আপলোড করা হলে আপনি এরপর সুরক্ষা ওয়েবসাইটে “শুধু পাসপোর্ট নাম্বার” দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারবেন।
আসুন টিকাগ্রহণ কে ভয় না করে সঠিক সময়ে টিকাগ্রহণ করি, করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ মোকাবেলা করি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, মাস্ক পরুন, সুস্থ থাকুন।